ভালোবাসার রূপ-প্রতিরূপ

 

ঠাস করে চড় কষে দিলাম তার গালে। সে অবাক হলো কী না বুঝতে পারিনি অন্য কথায় আমাকে বুঝতেই দেয়নি। তার এ জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে। কেন ভালো লাগে তার কোন কুল কিনারা করতে পারিনি আজোবধি আমার ওমন ব্যবহার তার কাছে খুব একটা যে অপরিচিত তা নয়। আমি মাঝে মাঝে ওমন করি কোনরূপ উদ্দেশ্য ছাড়াই। আজকের ঘটনাও হতে পারে সে ইতিহাসের ধারাবাহিকতার কোন অংশ!
 
তার সাথে আমার পরিচয়ের ব্যাপ্তি অনেকদিনের। কতদিন ভাবতে গেলে মনে হয় যুগ-যুগান্তরের। আরে ধূর, যুগ-যুগান্তর হতে যাবে কেন! আমি কী সৃষ্টিকাল থেকেই তার সাথে আছি অথবা আমার সাথে সে! মনে হয় এর উত্তর না। আসলে ওমন অদ্ভুতূড়ে ভাবনার কোন মানে নাই কারো কাছে। কিন্তু আমি ভাবি। হতে পারে ভাবতে ভালো লাগে বলে ভাবা, এর বেশি কিছু হয়তো নেই! কিন্তু এই ভাবনারাজির মাঝে সে কেন আছে ওমন করে! আমি জানি না এবং জানতেও চাইনি কোনদিনই।
 
তাকে নিয়ে আমার অনেক গল্প আছে। জীবনের গল্প। সে আমার জীবনের অংশ একটা জুড়ে আছে বলে তাকে নিয়ে আসলেই গল্পের শেষ নাই। কিছু কাহিনী আছে যা রীতিমতো অবাক করারই কোন উপলক্ষ্য। তাই সচেতনভাবেই যখন তাকে ভাবি তখন ভাবনার মাঝে আর কোন কিছুই আসেনা। ইচ্ছে করলেই দূরে ঠেলে দেয়া কষ্টকর হয় বৈকি! আমি হয়তো কষ্ট করতে পারি কিন্তু তাকে দূরে রাখার কষ্ট মনে হয় সম্ভব হবেনা কোনো কালেই। তাই আমাদের সপ্রতিভ সময়ে আমরা আমাদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি খুব করে। হতে পারে এখানে স্বার্থপরতার গন্ধ আছে কিন্তু নিজের ভালোবাসার প্রকাশে আসলে মানুষকে স্বার্থপর হতেই হয় বৈকি! আমি এবং সে সহজ কথায় আমরা স্বার্থপরই থেকে গেছি আগাগোড়া।
 
তার সাথে দেখা হবার দিনে আমার উদ্দেশ্য ছিলো ভিন্ন কোনো। পৌণে মধ্য বয়সী মানসিকতা যেমন হয় ঠিক তেমনই কিন্তু দেখা হবার পরে খানিকটা থমকে গিয়েছিলাম। একটা বন্ধু ডেকে বলেছিলো পা বাড়াস নে বন্ধু! অথচ আমি দেহ থেকে শুধুমাত্র হাতটা বাড়িয়েছিলাম চতুরতার সাথে। ভাবতে বসবেন না পাঠক চতুরতার এখানে কী? আছে আছে, ঢের আছে। তাই সে আমার হাত ধরেছিলো আচানক লয়ে। ভেবেছিলাম এ সাধারন বাড়ানো হাত। কিন্তু সময়ে এসে বুঝতে পারি এ হাত সাধারণের চাইতে ঢের বেশি। খুজেছে শুধু নির্ভরতা তাই আমার নির্ভরতার সম্মোহন দৃষ্টি একটা সময়ে তার মনের গহীন হয়ে নেমে এসেছিলো তার কাছে। তারপর এগিয়ে যাওয়া আর কাছাকাছি হয়ে থাকা।
 
ইতোমধ্যে আমি হয়ে গেছি নারী মনোসমীক্ষক। ক’জন বন্ধু আমার ভালোই ভক্ত বনে গেছে। আই কন্টাক্টকে নারী পটানোর কৌশল বলে ঘোষণা করেছি ইতোমধ্যে। কেউ কেউ সম্মতি জানিয়ে তাদের অনুরক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে আমাতে। বলেছিলাম, মেয়েরা ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চায় মনে মনে। কিছু প্রকাশভঙ্গি থাকে তাদের। এটা দূরদৃষ্টি দিয়ে আঁচ করে নিতে হয়। পাচবারের আই কন্টাক্ট যদি একবারের জন্যে হলেও প্রত্যুত্তর করে তবেই মনে হয় সার্থকতার কোন উপলক্ষ্য থেকেই যায়। তাই মুখ যেখানে খানিকটা বিব্রত কিছু বলতে সেখানে চোখ দিয়ে চোখের ভেতরে যাওয়া যায় অনেকখানি। তার সাথে আমার কয়েকটা মুহুর্তই কেটেছে এমন করেই!
 
সে আমাকে বলেছিলো আমি কোন মেয়েতে জড়িয়েছো কখনো। আমি সত্যি করে মিথ্যে বলেছি সেদিন। এছাড়া আর উপায় ছিলো না। নারীকে পেতে আসলে নারীকে অস্বীকারই করতে হয়। যদিও শুনতে খারাপ শোনায় তবু বাস্তবতা অস্বীকার করার জো নেই। তাই অবলীলায় চতুরতা নিয়ে মিথ্যে বলেছিলাম। কারণ নারী মন অন্য নারী সংসর্গ সহ্য করেনি কখনো এটা বলে দেয় ইতিহাস! আমি ইতিহাসের পাঠে নতুন কিছু যোগের আশায় আসলেই ইতিহাসকে ইতিহাসের পথে চলতে খানিক সাহায্য করেছিলাম! আমিও কম যাইনি তখনো একই প্রশ্ন ছুঁড়েছিলাম তার পানে। সে স্বভাব ভঙ্গিমায় বলেছিলো পুরুষ সংসর্গহীনতার কথা। আমি হয়তো মজে যাওয়া এক পথিক ছিলাম বলে বিশ্বেস করা ছাড়া আর উপায় ছিলো না। হতে পারি আমি ঠকিয়েছি তাকে কিন্তু সমবভাবে সেও আমার পথের পথিকও হতে পারে মাঝে মাঝে তৃপ্তির ব্যাপ্তিটা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
 
মাঝে মাঝে নারীকে স্বর্গ প্রতিমা ভাবি। তাই রাস্তায় চলতে যাওয়া নারীর দিকে তাকিয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকি। এই মাঝ বয়সী সন্নিকটমন বলে কলেজ গেটের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকি। অবগুন্ঠনে গিলতে থাকি নারীত্বের সুষমা। নারী, নারী, যতই মা-বোনের গোষ্ঠীই হও না কেন তুমিও আবার বউয়ের জাতও কেমন অস্বীকার করে যাই! তোমার চুলের দুলুনি, ভুরুর নাচনী, ঠোঁট রহস্যের সুগভীর ফাঁদ আর স্বর্গীয় অবতারের রূপ আমাকে কেন বারবার আপ্লুত করে আমি ঠিক তার রহস্যের উন্মোচন করতে পারিনি। মনে হয় তোমাদের সৃষ্টিতে ঈশ্বরের সবচেয়ে বেশিকাল লেগেছিলো বলে আমাদের জন্মের ইতিহাস খুব বেশি পূরনো হতে পারেনি। তাই যতখানি দেখি একটা অপরিপূর্ণতা ততবেশী গ্রাস করে যায়। একটা অপ্রাপ্তির আশঙ্কায় বারবার দুলে উঠি উর্বর দেহের মাতম দেখে।
 
আমার আমরার মধ্যকার সেও তেমন। তাই মাঘের তীব্র শীত রাতে মাথা উপর ঘুরাতে হয় তীব্র গতিবেগের বৈদ্যুতিক পাখা। নারীমন্ডিত পার্কে যেমন শীতের বিকেলে শীত নামে না তেমনি নামে না বিলাসবহুল এলাকায়ও। কারণ ওখানেও উর্বর নারীদের বাস। তাদের দেহের উর্বতায় শীত পালিয়ে যায় এলাকা ছেড়ে। যেমন পালায় আমাদের ঘরেও। আমার ঘরে অবশ্য ভালোবাসা আছে পূর্ণতা নিয়ে। তাই পরিবেশটা অর্থবহ হয়ে যায় রাত-দিনে। আমি খুঁজে নিই সে অর্থ সেও খুঁজে তাই আমাদের অর্থগুলো একই সুতোয় গাঁথা হয়ে যায় আগাগোড়া!
 
তাকে বলেছিলাম মা হবার কথা। প্রত্যুত্তরে হেসে বলেছে আমার বাবা হবার কথা। তার এ হাসি আমার দায়িত্ববোধ আরো বেশি করে বাড়িয়ে দেয়। আমি প্রাত্যহিক সুখ স্বপ্নে মেতে উঠি। সুখ, সুখ,অশেষ সুখ; যেন সৃষ্টিজন্মের স্বার্থকতা! আমি হাত ধরি, সেও প্রত্যুত্তর দেয় সমভাবে। বাইরে বয় বাতাসের তোড় মনের মাঝেও। একটা সুখপাখি শিরা দিয়ে বয়ে যায়। আমি তাকে ধরি একান্ত ঢঙে। আবারো উল্টে ক্যালেন্ডারের পাতা। আমি অবাক হয়ে তাকাই সেদিকে। সেও তাকায়। তারপর একটা হাসি, শীতল একটা হাসি অশেষ প্রাপ্তিযোগ বলে লিখে রাখি মনের গহীন কোণে।
 
বলেছিলাম ঠাস করে দেয়া চড়ের কথা। তার কার্যকারনের হদিসও পাইনি এখনো। হতে পারে ভালোবাসার বাহুল্যতার অমার্জিত প্রকাশ। কিন্তু বিশ্বেস করো, মার্জিত-অমার্জিতের সংজ্ঞা এখানে এসে মার খায় সেই ধূসর সকাল থেকে। তাই লোকচক্ষুর অমার্জিতরূপ রূপবদলে আমাদের কাছে এসে হয়ে যায় অন্য কোন কিছু! আমি অবাক হই, আমাকে অবাক হতেই হয় এই ভেবে- আমাদের কালে আমরাই কেবল বদলাতে পারি ভালোবাসার রূপ-প্রতিরূপ!
১৬-০২-২০১১

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।