পৃথিবী স্বদেশ যার আমি তার সঙ্গী চিরদিন: গণমানুষের কবি দিলওয়ারের জন্মদিন আজ (১লা জানুয়ারী)

 

পৃথিবী স্বদেশ যার
আমি তার সঙ্গী চিরদিন ৷
এই অমর লাইনগুলো গণমানুষের কবি দিলওয়ার-এর। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কবির জন্মদিন আজ। জন্মদিনে কবির প্রতি অনন্ত শ্রদ্ধা।
 
কবি দিলওয়ার। যাকে গণমানুষের কবি বলা হয়ে থাকে। পুরো নাম দিলওয়ার খান। জন্ম ১লা জানুয়ারী ১৯৩৭ সাল ৷ সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা গ্রামে তাঁর জন্ম ৷ পিতা মৌলভী মোহাম্মদ হাসান খান এবং মাতা রহিমুন্নেসা ৷ দিলওয়ার চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে সপ্তম ৷ তাঁর পিতামহ মহসিন খান এবং মাতামহ ইয়াসিন মিয়া ৷ তার এক ছেলে কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। কবি-র জন্মভূমি কেমন হওয়া উচিত ছিলো, সে সম্পর্কে কবি বলছেন-” কবি-র রাজ্যে রাজা-বাদশা-র কিংবা রাজ্যসাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের বুকফাটা হাহাকার অথবা উল্লাসের অট্টহাস্য নেই ৷ এই রাজ্যে রয়েছে এক অখন্ড- জীবনবোধ, যার প্রেম-প্রীতি, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না দক্ষিণমেরু থেকে উত্তরমেরু অবধি বিস্মৃত! কালের শুভেচ্ছায় কবি ও কবিতার জগত্‍ চিরসবুজ, অবিনাশী যৌবনের প্রতীক!” (এককথা, ‘দিলওয়ার’, ১ জানুয়ারী ২০০৫)
 
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে দিলওয়ার কর্মজীবন শুরু করলেও মাত্র দু’মাস পর তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেন ৷ যুক্ত হন সাংবাদিকতায় ৷ তিনি ১৯৬৭ সালে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন ৷ ১৯৬৯ সালে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি সিলেটে চলে আসেন ৷ ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সিলেটের কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের নিয়ে গঠন করেন ‘সমস্বর লেখক ও শিল্পী সংস্থা’ এবং উনসত্তরের গণআন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সমস্বর-কে স্বাধীনতার প্রতীকে কাজে লাগান ৷ ১৯৭৩-৭৪ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকন্ঠের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ৷ ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকাস্থ রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত মাসিক উদয়ন পত্রিকার সিনিয়র অনুবাদক হিসেবে প্রায় দুই মাসের মতো কাজ করেন ৷ ১৯৬০ সালে এই কবি-র একটি গান দিয়ে সিলেট রেডিও স্টেশনের উদ্বোধন করা হয় ৷ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গ্রামোফোন কোং লিঃ কবি-র ৪টি গান দিয়ে একটি ডিস্ক বাজারে ছাড়ে ৷ গানগুলো হলো- মুর্শিদ আমি খুঁজবো না গো, তুমি রহমতের নদীয়া, মন আমার কেমন করে, ও নদীর ঘাটে জল আনিতে গিয়া ৷
 
গণমানুষের কবি দিলওয়ারের মুল লেখালেখির ক্ষেত্র ছিল সাহিত্য। তিনি এ পর্যন্ত যা লিখেছেন তার বেশিরভাগই গ্রন্থভুক্ত হয়নি। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমুহ হলোঃ জিজ্ঞাসা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৫৩), ঐক্যতান (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৬৪), পুবাল হাওয়া (গানের বই, ১৯৬৫), উদ্ভিন্ন উলস্নাস (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৬৯), বাংলা তোমার আমার (গানের বই, ১৯৭২), ফেসিং দি মিউজিক (ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ, ১৯৭৫), স্বনিষ্ঠ সনেট (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৭৭), রক্তে আমর অনাদি অস্থি (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৮১), বাংলাদেশ জন্ম না নিলে (প্রবন্ধগ্রন্থ, ১৯৮৫), নির্বাচিত কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৮৭), দিলওয়ারের শত ছড়া (ছড়ার বই, ১৯৮৯), দিলওয়ারের একুশের কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৩), দিলওয়ারের স্বাধীনতার কবিতা (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৩), ছাড়ায় অ আ ক খ (ছড়ার বই, ১৯৯৪), দিলওয়ারের রচনাসমগ্র ১ম খ- (১৯৯৯), দিলওয়ার-এর রচনা সমগ্র ২য় খ- (২০০০), ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ডাকে (ভ্রমণ, ২০০১) ৷
 
“বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কবিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ” বাংলা একাডেমী ১৯৮০ সালে দিলওয়ার-কে সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করে এবং পরে ১৯৮১ সালে ফেলোশিপ প্রদান করে ৷ ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ কর্তৃক ১৯৮৬ সালের আবুল মনসুর সাহিত্য পুরস্কার লাভ ৷ ১৯৯১ সালে দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা স্মৃতিপদক ও সম্মাননা লাভ ৷ রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার লাভ, সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার লাভ এবং অন্যান্য ৷ ২০০১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ সংবর্ধনা প্রদান করে ৷ বাংলাদেশের পক্ষে কবি দিলওয়ার এবং ভারতের পক্ষে বরেণ্য আলোকচিত্রী রবিন সেনগুপ্তকে সংবর্ধনা দেয়া হয় ৷ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কবীর চৌধুরীর ভাষায়- কবি দিলওয়ারের সাহিত্য কর্মের জাতীয়ভাবে যথার্থ মূল্যায়ন করা হলে তিনি দেশবাসীকে নোবেল প্রাইজ উপহার দিতে পারতেন ৷ কবি দিলওয়ার ২০০৮ সালে একুশে পদক লাভ করেন যা তার অবদানের জন্যে আরো আগেই পাওয়া উচিত ছিল।
 
চিরায়ত পথ ধরে যারা যায় আর যারা আসে
মুদ্রার দুপিঠ তারা, প্রেম নিয়ে মাটিতে আকাশে- দিলওয়ার।

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।