নিরবচ্ছিন্ন পাখিসমূহ

নিরবচ্ছিন্ন পাখিসমূহ

 

নিরবচ্ছিন্ন পাখিসমূহ
কবির য়াহমদ
 
(এটা ৩য় কাব্যগ্রন্থ। একুশে বইমেলা ২০১২তে প্রকাশ হয়। প্রকাশক: বাঙলায়ন। প্রচ্ছদ: ইসমাইল গনি হিমন।)
১ম ফ্ল্যাপঃ
খুব ভোরে সূর্য উঠার আগে একবার নিজস্ব ভুলে অনেক দূর পথ হেঁটে গিয়েছিলাম একাকী। অনেক পথ হেঁটে যাবার পরে মনে হয় এখনো শুরু হয়নি পথচলা। তাই ফি পথে পথচলার শুরু ফি-বার! এভাবে, এভাবেই হয়তো কোন একদিন পথের দেখা পাওয়া হবে বলে জেনেছিলাম কেউ কোন একজনের কাছ থেকে! কে, কখন আর কেনই বা বলেছিলো তা আমি মনে করতে পারছিনা মোটেও!
 
এখানে যেখানে একবার তুমুল পদক্ষেপ ফেলেছিলাম সেখানে আজ দেখি কিম্ভূত পদচিহ্ন। এ আমার নয় বলে খানিক অবিশ্বাস্য চোখে বলেছিলাম কেউ কোন একজনকে।  একান্ত সময়ে ভেবে দেখি এ আমার ভুল ছিল; খুব চোখে পড়া ভুলই! তাই ভুলের ফেরে নিজেকে জড়ানো হবেনা বলে সাক্ষী রেখেছিলাম একটা অবিশ্রান্ত পাখিকে। এ পাখি ডানা মেলতে জানে। তাই পূনর্বার ডানা মেলে বাতাসে; ফুড়ুৎ!
 
কিছু নিরবচ্ছিন্ন সময় কিছু নিরবচ্ছিন্ন পাখিদের সখা হয়েছে। আমি হয়তো তার কাছাকাছি সময়ে তাদের কাছাকাছিই আসি। কাছে আসা মানে পুরো কাছের  না হলেও কিছুটা সময় ধার করে নিই পাখিদের থেকে। পাখিসমূহ হয়তো আনমনে হাসে, আমি বুঝতে পারিনা তাদের মনোগতি। 
পাখিসমাজে থেকে পাখিদের থেকে খানিক দূরে হলেও পাখিদের গান শুনছি অদ্য!
 
 
আমি দাঁড়িয়ে আছি
 
ঘনঘোর কালোরাতে আমাকে আশ্রয় দিয়ো। আমি বিনা বাক্যব্যয়ে  আমাকে সমর্পণ করে নেবো অবশেষে। আমি খানিকটাও ত্যক্ত করবো না তোমায়। শুধু তুমি একবারের জন্যে হলেও আমার ঘামসিক্ত কপালে মুছে দিয়ো আপাতদৃশ্য অবাঞ্ছিত ঘাম। তখন আর থাকবেনা কিছু চাওয়ার তোমার কাছে।
হতে পারে বলছি এখন চাইবো না কিছু কিন্তু কে জানে খানিকটা ছোঁয়া বদলে দিতে পারে এখনকার ভাবনার ঘুড়ি। বাস্তবিক ঘুড়ি আকাশে উড়ে। পথিকের চোখ স্থির ওখানে অথচ কেউ জানতে চায়নি কোনদিন নাটাইয়ের খোঁজ। আমিও ছিলাম তাদের দলে। অথচ এ দিবালোকসম, সত্যাসত্য যাচাইয়ের কোন উপলক্ষ বাকী রাখেনা।
একরাতের কাছে নিজেকে বদ্ধ রেখেছি এতদিন। কে জানে আর কতরাত সে রাতকে রোমন্থন করে যাবো অবলীলায়। আমার দায় আছে ওখানে। হতে পারে দায় দেখে দায়িত্ব বর্তায়। তাই খানিক রক্তচক্ষুর কাছে যখন নিজেকে এলিয়ে দিতে যাই তখনই ভেসে উঠে পরিচিত কোন দৃশ্যের পরবর্তী দৃশ্যপাঠ। যা ছিল সহজাত যদিও কোন কোন সময়ে অজ্ঞদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দালিলীক প্রমাণ।
বলেছিলাম, ঘাম মুছে দিলে চাইবো না বাড়তি কিছু আর। তবু রাতকে সাক্ষী রেখে বলি, সময়ের ধারাবাহিক পাঠে আমি না বলতে পারিনি কোন দিন কোন কিছুতেই। তাই পরের পর্বের পরবর্তী পাঠে আমি হয়ে যাবো সাক্ষীর সাক্ষ্য। যা কিছু সময়ের তার সাথে যদি থাকে তোমার তুমি যা আমার একান্ত সময়ের একান্তজন তবে আমি হারাতেও পারি আমার নিজেকে তোমার মাঝে। 
শুধু শুনে যাও আর একবার সেই পরিচিত রাতের গল্প। দেখো, আজ রাত জেগেছে রাতের নিয়মে অথচ ভেতরে বইছে তার উজ্জ্বল নদী; তোমার রূপ নিয়ে। তুমি দেখে যাও, ছুঁয়ে যাও আজ রাতের গতর। আমি দাঁড়িয়েছি আজ রাতের দুয়ারে; তোমার স্পর্শের কাছে- অতি কাছে! 
 
নগ্নতা বিষয়ক
 
নিজের কাছে মানুষ দৃশ্যত নগ্ন
তাই অপরাপর নগ্নতা খুব বাজে চোখে
মনে মনে উপভোগ শেষে বাতাসে ছুঁড়ে দেয় একগাদা গাল
ইস, কী অসহ্য নগ্নতার উল্লম্ফন!
মানুষের একান্ত মনোমুক্ত আকাশ নেই সেই আদিকাল থেকে
অহর্নিশ পরিবর্তিত রূপে রূপায়ন তার যেন বহতা বাতাস
জীবন দৃশ্যত অভিধান এক, তাই সাগ্রহে খুঁজে চলা
নিজেকে নিয়ে, নিজের নগ্নতা আর অপরাপরের দৃশ্যাবলী নিয়েও।
একদিন নিজেকে নিয়ে গেলে সাগরের তীরে
দরোজা বন্ধের অভিপ্রায় জাগে একান্ত সময়ে
তাই পাপড়িগুলো মাঝে মাঝে হয়ে যায় অগোছালো পথিক
কিছু শ্লথমাথা পা সামান্য গতি পায় আশ্লেষে
অবকাশ যাপনে আবারো সামনে আসে নগ্ন পা; নগ্নরূপ
বাতাসে হামাগুড়ি দেয় নগ্নতার ক্রিয়াকারণ
ম্রিয়মাণ হয় বাকি সব, অন্ধকারের ওপার থেকে ভেসে আসে খানিক আলো।
একটা নগ্ন হাতের চেয়ে বেশি টানে নগ্ন পা
অনবরত ছুটে চলায় পেছনে ডাকে অজানিত গন্ধ
তাই স্বভাব আকর্ষণ গোপন কুঠুরিতে বাসা বাঁধে আচানক
চোখে ভাসে নগ্নতা আর নগ্ন সৌন্দর্যকলা-
একদিন নিজের করে নেবো সব, একদিন নিজের হয়ে যাবে সব
একদিনের পৃথিবী তবে হোক নগ্নতার বিমূর্ত চিত্রকলা।
 
 
প্রজাপতি 
 
তোমাদের নিস্তরঙ্গ বাগানে একটা প্রজাপতি উড়েছিল
জেনেছিলাম তার আজন্ম সাধ ছিল পাখা গজাবার
আপনার পাখা ছিলনা বলে-
বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোন এক ডানার আশায়
প্রজাপতি হয়েছিল সে তার জন্মাবার কালে
আমৃত্যু থেকেছিল আবার প্রজাপতি হয়েই
প্রজাপতি,প্রজাপতি হরেক প্রজাপতি তবু অচেনা কোনজন।
 
একদিন খুব ভোরে একটা ফুল তুলেছিলাম
ফুলটা অজানিত কোনো গন্ধমাখা; বুঁনো গন্ধ
আমার নাকে-মুখে কী বিষম অনুভুতি
সারা পাড়া লাইন ধরেছিল পিছু পিছু
আমি পাড়াকে নিয়ে গিয়েছিলাম আর এক পাড়ার কাছে
পাড়া পাড়া কাছে আসে, জানতে চায় পূর্বাপর
আমি তাদের মাঝপথে রেখে কেটে পড়ি আপনার পথে।
 
অদ্য দুপুরে কোন এক নিস্তরঙ্গ কাক আমাকে দেখেছিল
আতিথেয়তার মালা পরিয়ে দেবার কালে আমি দেখিয়েছি ব্যস্ততা
আমার ব্যস্ততা ত্রস্ত পায়ে হাঁটে, কাটে না, তবু
আমার সামনে জ্বলজ্বলে ভেসেছিল আমার পূর্বপুরুষ
আমি তাদের শুধাই আমার জন্মক্ষণ আর ইতিহাস
তার বলে না কিছু,শুধু হাসে, হাসাটাই ধর্ম বলে
অথচ সে-ই আবার আমায় কোনোকালে বলেছিল
একদিন ইতিহাসের মাঝনদীতে সাঁতার শেখাবে
আমি উন্মুখ ছিলাম বলে নিজ় থেকে সাঁতার শিখিনি এতোদিনেও।
 
আমরা আমাদের কাল প্রজাপতির কাছে বন্ধক রেখেছিলাম একদিন
দেনা শোধের কথা ছিল আগাগোড়া অথচ তার ধারে-কাছে যাইনি
ফলত প্রজাপতি প্রজাপতি হয়। বেড়ে চলে খতিয়ান
হালখাতার কাল সামনে আসে, আমি ভুলে চলি আমাকে
ব্যস্ততাকে সামনে নিয়ে বসি, নিজেকে ভুলার প্রকৃত দাওয়াই
আমি সব ভুলে যাই, সব ভুলে যায় সমূহ ধার-দেনা
আমি আমাকে ভুলে গেলে প্রজাপতিটাও আমার নাম লেখা
অনিঃশেষ খেরোখাতায়!
 
উইল
 
সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে বিষাদ মেঘ
সুখ সমরে জয়ী হয়েছে সে অদ্য
তাই খাঁজে খাঁজে কিম্ভূত চিহ্ন সবিশেষ,
বোকামোর একটা মাত্রা ছাড়িয়েছে প্রজাপতি
স্বভাব সময়ে বিরুদ্ধ পথের যাত্রী কচুরিপানা সদৃশ।
একটা নিবিড় বৃক্ষ ঠায় দাঁড়িয়েছিল এতদিন পথের ধারে
তার দিকে দু’কদম এগুতে গেলে-
পিছিয়ে পড়ে কিছুটা সময় চোখের পিঁচুটি ধরে।
কত কাছ দিয়ে সেদিন বইছিল সুরমার জল
অদ্যকার পায়ে হাঁটা পথ বুড়িগঙ্গা তীরে,
খাঁজে খাঁজে জ্যোৎস্না নামে, ক্ষীণকায় সুড়ঙ্গে বঙ্গোপসাগর।
একটা দানপাত্রে আজ সাক্ষী হোক উপস্থিতজন
বিষাদের সর্বস্ব দিয়ে যেতে চাই আজ উইল করে
একপক্ষে রাখা হোক আমাকে আর আরেকপক্ষে সমূহ বিষাদ!
 
পাপ 
 
বৃষ্টি দেখি চোখে চোখে তাই সাধ হয়
 একদিন বৃষ্টি হই,একদিন বৃষ্টি হয়ে জড়িয়ে নিই তোমায়
 গা ছমছম বৃষ্টি,শ্বেত শুভ্র বৃষ্টি
 বৃষ্টি হবো তাই বৃষ্টি মাঝে নিজেকে জড়িয়েছি আগাগোড়া।
 
 তার চোখে চোখ রেখে একদিন বলেছিলাম
 এসো বৃষ্টি নামাই, এসো বৃষ্টি হই-
 সে কিছু বলেনি শুধু অবাক বিস্ময় তাড়া করছিলো তার চোখ
 আমি বুঝে নিয়েছিলাম তার চোখভাষা 
 তাই শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নামানো হয়ে ওঠেনি
 হয়ে উঠেনি বৃষ্টি অথবা তার আগেকার বিমূর্ত মেঘ!
 
 সে কানে কানে বলেছিলো এ পাপ, জন্মের পাপ
 অকালে বৃষ্টি হতে নেই-
 আমি পাপের পথে পা দিতে বলি তবে কি পাপরাজ্যে আকাশের বাস
 আমার অবাক চোখ আকাশ মাঝে খুঁজে পাপচিহ্ন।
 পাপ, পাপ, অনেক পাপ, হাওয়ায় ভাসে পাপ
 আমি পাপে পাপ খুঁজি, হয়ে যাই পাপে একেশ্বর 
 অথচ দিনশেষে দেখি আকাশে কোন পাপ নেই-
 আমি কেন তবে হবো পাপের ধারক!
 
পালক
 
চোখে চোখ মেলে দেখো-
 চোখেই সাগর জমে একফোঁটা জলের আশায়
 যে দিন গত হয়েছে কাল; কালের স্রোতে
 তার অধরে জমে ছিল কিছু জল
 জলসিঞ্চনে খাঁ খাঁ মাঠ,প্রতীক্ষায় কেবল চাতক পাখি।
 
 এ পাখি,পাখি যার মোহময় সোনালী পালক,
 পালক খসানো কালে আড়মোড়া ভাঙে ঋজুবর্তী হয়ে
 একদিন পাখিসমাজে আবির্ভাবকালে নিজেকে চেনেনি সে
 তবু মেলেছিল ডানা দূর আকাশে-
 আকাশে সাধ ছিল তার, আকাশের স্বাদ নেবার
 আকাশও দেখেছিলো সে নিজস্বতায়;
 সংজ্ঞায়নও করে বসে ইত্যবসরে।
 
 চোখ যার পাখি তার আকাশে ভাসে পালক ফের
 গতকাল গত হয় কালের স্রোতে কেউ পায়নি যার টের!
 
পা
 
একটা পা আরেকটা পা’র খুব আপন
সচরাচর আমন্ত্রণ জানায় পথে নামার
পা’গুলো পথে নামে পা’দের সাথে
তারপর দিন-রাতের কোন এক সময়ে
রঙিন প্রজাপতি হয় যুগল পা রূপে।
 
দুইটা পা মাঝে মাঝে একান্ত সময়ে
মিলিত হয় একান্ত জনের-
মাটি ছেড়ে আকাশমুখী  হয়ে যায়
নিঃশ্বাসের বাষ্পরূপ নিবন্ধন করে রাখে
এক নিরীহ ছারপোকা।
 
একজোড়া পা’তে নূপুরের ঝংকার
এ এক আয়েশী কল্লোল সমুদ্র গর্জনে
আমার গরীব পা’গুলো অপেক্ষায় থাকে সতত,
ভ্রম হয়, ভ্রম কাটে-
মনে হয় শির হয়ে আকাশ পানে উঁচিয়ে রাখি তার পা!
 
অপেক্ষা
 
একটা তীব্র পেলব রাতের অপেক্ষায় আছি
যার অধর ছুঁয়ে যাবে মখমল রঙে 
আমি ছুঁয়ে যাবো তাঁর হৃদয় অলিন্দ্য; পোড়ামুখি নয় সপ্রতিভ আবেশে,
শুনেছি, রাতের গতরে জড়িয়ে থাকে অশেষ ওম
আমি ওম ছোঁবো, ওমের গতর ধরে টান দিয়ে ভেতরে দেখে নেবো নির্নিমেষ মোহময়তা,
মোহময়তায় আমার আকাঙ্ক্ষা ঢের
তাই ফি-রাত মোহময়তাকে খুঁজে ফিরি দুর্নিবার টানে।
 
রাতের গতরে বসত করে আদি প্রেম, আমি আদি প্রেমে সওয়ার হবো
গতরে গতরে যদি প্রেম জাগে আমি তবে বোবা দর্শক হবো
দূর থেকে দেখো নেবো সব, কাছে এসে গিলে নেবো সব
এ প্রেম সত্য সত্যই প্রেম নির্মোহ প্রাগৈতিহাসিক! 
 
সুদূরের হুইসেল
 
এক রাত পাড়ি দিলে তুমি চলে আসো আমার কাছে
আমি বসে থাকি ঠায় দাঁড়িয়ে তোমার পানে
রেল লাইনের স্লিপারে জমে থাকে জীবনের ঘাম
ঘাম ঝরে নির্বিকার,ফোঁটা-ফোঁটা যেন শোধ হয় জন্মের ঋণ।
 
জন্মে যারা জেনে নেয় জন্মের ইতিহাস তাদের কথা আলাদা
যদিও তারা মৃত্যু পানে ধাবমান তবু জন্মের ইতিহাস পিছু ঘুরে 
মাথা-মাথা ঘুরে আশ্রয়ের খোঁজে, আশ্রয় কোথা; কোন গহীনে,
যারা জানে তারা জেনেই চলে তাই পথিমধ্যে পৃথিবী আগলায়
কায়ক্লেশহীন জীবন তাদের, দূরে হাঁক ছাড়ে ভুখা শালিক,
শালিকের গলায় ঝুলে মুক্তো দানা, পথিকের খোঁজে পথ খোঁজে
পথে পথে আগলায় পথ চিরসবুজ আদুরে কথন।
 
থেমে যায় রেল লাইন রেলের স্লিপার ধরে, নেমে আসে চাঁদ একপ্রস্থ
কবে কোথাকার কোন চাঁদ বাড়ি ফিরে, রেল লাইনে সমূহ আশ্রয়,
রেল লাইনের ফাঁক গলা পথ হাপিত্যেশে মরে পদচিহ্নের খোঁজে
এক পথে তেড়ে আসে রেল আরেক পথে চতুর পা
পা হাঁটে, রেল দৌড়ায়, কার গতি কত মাপেনি কেউ
তবু কেউ কেউ আনমনা হয় নিজেদের ভেবে সময় ফুরায় ক্রমশ
যার গতি যত সে দৌড়ায় তত তবু রেল পথ নির্বিকার থাকে জন্মের মত
জন্মে বন্ধক রেখেছে জীবনের গতি জীবনের কাছে, 
জীবন থমকায় শালিক পুচ্ছে, পালক খসে জীবনের সাথে
একটা শালিক, একটা জীবন তার তাই গতি কমে স্বভাববিরুদ্ধ হয়ে
পালক খসে রাতের সাথে তোমাকে ভেবে- আর কত পথ শুধায় পথিক
দাঁড়িয়ে থাকে ফের অদূরে কোথাও বেজে উঠবে সুদূরের হুইসেল!
 
 
 
গোরস্থানের ভাষা
 
গোরস্থানে শুয়ে আছে জ্ঞাতিগোষ্ঠী
তারা নৃ-তাত্ত্বিকতা ভেদে সংজ্ঞায়িত হয় কালে কালে
যদিও কভু শেখেনি নৃ-বিজ্ঞানের ছলাকলা।
একটা ভোগবাদী চামুচ উঠে আসে ধীরে
অধর ছুঁয়ে যায় হিম হাতে; কালো সে হাত
দিঘল কালো ঠিক ঠিক মজা পুকুরের মতো পানায় পানায় পূর্ণ,
একটা নক্ষত্র হেলে পড়ে ধীরে জ্যোতির্বিদদের ঘুম হারাম করে
তাদের মাথার ঘিলুতে মোচড় দিয়ে উঠে আমাদের একান্নবর্তী সময়ে
গোরস্থানে ঘাস গজায়। একটা গরু দৌড় দেয় প্রাণপনে
বেকুব গরু, মানুষ সমাজে থেকে থেকেও এতদিনে ভাষা শেখেনি মানুষের 
দৌড়ায়, দৌড়ক্ষনে পিছন দেখেনা। স্বভাব সময়ে অভুক্ত থাকে এ বেলা
গোরস্থানে বেড়ে উঠা ঘাস আরো দীঘল হয় রমণীর কালো কেশের সাথে 
ঘাস বাড়ে, কেশ বাড়ে, দৌড়ায় বেকুব গরু, গোরবাসীরা বুড়ো হতে থাকে
গোরস্থানের আলগা দরজায় টোকা মারেনা কেউ এমনকি নিজেরাও
গোরবাসী ভুলে যায় তাদের অতীত, গোরে শুয়ে শুয়ে গোরকল্পনা
ভুলে যায় একদিন তারাও মানুষ ছিলো আর মানুষ শেখেনি কভু গোরস্থানের ভাষা।
 
জন্মইতিহাসের লগ্ন  
 
এক অতৃপ্ত আত্মার কাছে হাত পেতেছিলাম আত্মার লোভে
আত্মারা আত্মাময় হয় নিশিরাতে যখন পাড়ার ককুরও বেঘোরে ঘুমায়
ঘুম ঘুম চোখে কেউ জাগে প্রাগৈতিহাসিক ঢঙে আমিও হার মানি
মগজের জমে থাকা শিরাগুলোর নির্বিবাদী চিৎকার-উল্লাসে কেঁপে উঠে বুক’
বুকের জমিনে বাসা বাধে ঘুণপোকা নির্বিকার দেখে জন্মইতিহাস
জন্মের সময়ে জন্মাবার শপথ আর একবার মাথা চাড়া দেয় মাঝরাতে।
 
ভুলে যাই কাল ছিল অমাবস্যার কাল আজ পূর্ণিমা পেখম খুলতে বসেছে
দেহে দেহে দেহের মাতম উঠে জন্মইতিহাসের লগ্ন শুরু হবে বলে!
 
সুযোগ পেলে ডাকাত হবো
 
ঝিম হয়ে আসে মাথা
ঝিম ঝিম ভাবে মাথায় ঢুকে ঘুণপোকা
ঘুণে কাটে সময়; ঘুণে কাটে মন
মন রাখে মনের খবর
তবু মন অবাধ্য মন বারেবারে খুঁজে মনের বাড়ি
মনবাড়ি মনবাড়িতে লুকিয়েছে অদ্য 
মনের দেখা কোথা? তাই অদ্য ভেবেছি দিনভর
সুযোগ পেলে একবার ডাকাত হবো!
 
 
বৃষ্টি
 
কোন এক বৃষ্টিবিকেলে যদি আকাশের দিকে যাই
তবে মাটির সমতলপট গোমড়ামুখো হয়
বার কয়েক দৃষ্টি বিনিময়ে আপাত সম্মোহিতভাব
মিইয়ে আসে আচমকা বিস্বাদের।
বিস্বাদের ঝড় আহা, আহা বৃষ্টিবিকেল
আমাকে দেখিয়ে দেয় পাহাড়ী পথ-
আমার আশ্রয়স্থল একদিন দেখিয়ে দিয়েছিল
এক উদ্ভ্রান্ত শালিক ভোরবিহানে 
আমি শালিকের পাখা দেখেছি খানিক ইশারাসদৃশ 
বাকিটা আড়াল ছিল বায়বীয় বাতাসে।
জানি, জানি এবং জানি এ পথে বাতাসের তোড়
উল্টোপথেও উল্টোসুর-
তবু সব পথেই আজ বৃষ্টির দেখা
তাই আমি আজ বৃষ্টি ছোঁবো,
প্রিয় বৃষ্টি, আমাকে আজ ছুঁয়ে যাও তোমার প্রাণসখা ভেবে।
 
 
সঙ্গম শেষে রাতের গল্প নিতান্ত একঘেয়ে
 
রাত শেষে দিনভর রাতের পথে হাঁটি
কতিপয় বৃষ্টি সাথে নিলে দোষ নেই
স্বাচ্ছন্দ্যে নত হওয়া যায় বীর্যবান কোন ডানার কাছে
যে ঠোঁট মিশেছিল বিপরীত কোন ঠোঁটের সাথে
আমি রোজ রোজ নাম ওঠাতে চাই সেই আদি প্রেমপর্বে
 
ঊন্মাদনার দেখেছো কী-
এ মাতাল সমীরণ খুলে দেয় সব অজানিত গুহা
তাই সঙ্গম শেষে রাতের গল্প নিতান্ত একঘেয়ে!
 
 
কবিসভা
 
কোন একদিন শুক্কুরবার নেমেছিল ধরায়
আলগোছে ব্যস্ততম দিনগুলো জমিয়ে রেখেছিলাম জামার আস্তিনে
তাই বেখেয়ালে দিনটা কাটিয়েছিলাম ঘুমে অথবা আধোঘুমে
ঘুম, ঘুম- আধোঘুম কিংবা নির্ঘূম দিন 
স্বভাব সময় কেটে যায় স্বভাব সময়ে
ফলে কবিসভা কড়া নাড়ে দুয়ারে অথবা ঠিক ঠিক কানের কাছে।
 
জেনেছিলাম এক কবিসভা বসবে ছাতিমগাছের তলে
ছাতিম না-কী গেয়ো গাছ তাই চেনেনা কেউ তবে গেয়োলোক বলে আমি চিনি
আমার গতর থেকে আসে আজো গোয়োগন্ধ
 
কবি কবি স্বভাব কবি প্রান্তিক কবিও ছিল সেখানে
তবে অনেকের হাতেই গুজে দেয়া ছিলো কবিতা না পড়ার অনুরোধবার্তা,
এ অনুরোধের ঢেকি গিলেছিল অনেকেই
আমিও ছিলাম তার দলে যদিও আমি নই কোন স্বভাব কবি।
 
কবিদের বলা ছিল গাও গান
তাই তারা গেয়েছিল গান বেসুরো সূরে
হাততালিও পড়েছিল বেশ,
হাতে হাতে হাত মিলে গেলে শেষ হয় কবিসভা
কবিরা ফেরে ঘরে কবিতা ছাড়াই!
 
দিন যায় দিন আসে
কবিদের মগজে জন্ম নেয় নূতন কবিতা
কবিতার দলে কবিতা হারায়, কবি মজে কবিতার খাতায়,
আলগোছে খবর আসে এই কবিদের ভীড়ে ছিল 
এক নেড়িকুত্তা অথবা কোন এক পাগলা কুকুরের সহোদর
যার বিষ কামড় জলাতংক রোগ ছড়ায়-
কোন কোন কবি অথবা বাকি সব কবিদের গতরে!
 
খেল
 
এ এক আজব খেল-
মাথার ওপর ঝুলিয়েছে যাবজ্জীবনের খড়গ
জারি করেছে হুলিয়া,তাই
পালিয়ে বেড়াই ঘর থেকে ঘরে;আশ্রয়ের খোঁজে
একমুঠো আশ্রয়,মাথা গোঁজার ঠাঁই
দিয়ে দিলে কেউ-আমি হয়ে যাবো আমৃত্যু ভৃত্য এক!
অপরাধী সাজিয়েছে যে
সে শোনায়নি কভু অপরাধের সংজ্ঞা
আমি ভাবি আমার মতো সে ভাবে তার মতো করে
মাঝখানে তৃতীয় পক্ষের যত আগ্রহ
আমাকে আমা থেকে আলগা করার প্রাণান্ত প্রয়াস
আমি পড়ে যাই কালের ফেরে
পথে পথে দেখি অনেক পথ অথচ
পা ফেলার নাই খানিকটা ঠাঁই।
মনে পড়ে ইস্টিশান আর রোদেলা দুপুর
টেনে নিয়ে আসে ঘরের কোণ থেকে ঘরকুনোদের
আমি পড়ে যাই অলক্ষ্যে তাদের দলে
আমাকে মিহিস্বরে ডাকে দূরবর্তী ট্রেন
আমি উতলা হই পুনর্বার-
ভুলতে বসি আজব খেলের আচানক কাহিনী
আশ্রয়ের খোঁজ আর যাবজ্জীবনের খড়গ।
 
হে খেলের খেলুড়েজন,
আমাদের মিহিস্বর অদ্য ভোরে দেখেছে সূর্যের মুখ
একমুঠো আলোও ছুঁয়ে গেছে নিশ-পিশ হাতে
তুমি যদি ফের ঘুরাতে যাও তোমার খড়গ
জেনে রেখো, আমিও জেনে গেছি-
খড়গ ঘোরাবার সমূহ ছলাকলা।
 
কেন
 
ও জেনে ছিল আর কারো কাছে
এখানে সতত আড্ডায় মাতে বেকুব কবির দল
তবু তার কাছে প্রশ্ন ছিল-কেন?
শুধুই কেন?
সে হয়তো দিতে চায়নি তার সদুত্তর
তাই প্রশ্নটা হারিয়েছিল প্রশ্নমাঝে
তারপর অনেকদিন-
কতশত উত্তরের বায়ু ধায় দখিনে
কত রাতজাগা চাঁদ অন্যের বোঝা কাঁধে নেয়
ভোর হবে বলে কত পাখি গলার পাথর ছাড়ে
নূতনের আবাহনে কতশত ঘাসে জাগে
প্রভিন্ন মুকুল।
 
তারা যারা বলেছিল থাকবে কাছাকাছি
তাদের কেউ একজন চুপিসারে কাছে আসে
চুপিচুপি বলতে যায় কিছু
পাছে দেয়ালের কানে যায় মিহিস্বর
যে দেয়াল ঠায় দাঁড়ানো ছিল এত্তোকাল
বূড়ো বটের মত-
তার পরতে পরতে জমে পলেস্তারা
রোদ-বৃষ্টিকে একান্ত করে ভেবে রাখে
তাই তার গা ছুঁয়ে যায় অশেষ পংক্তিমালা
কেউ তারে ভাবেনি
কার এত সময় হাতে সময় নষ্ট করার!
 
পথে পথে পথময় হয়ে গেলে সব
বয়েসী বটের কাছে ভিখ মাগে তারা
সেও আবার হাত পাতে আর কারো কাছে
এভাবে কোন একদিন-
কবিদের ভীড়ে কবি হারায়
ভীড় হারায় ভীড়ের ভীড়ে
পাওয়া হয়না কারো কাছে কখনো কেন’র সদুত্তর!
 
সুশীলের গণতন্ত্র
 
সন্ধ্যারাতে আকাশ দেখতে যেয়ে থমকে যাই
আকাশের মাঝে বসত গাড়ে কতিপয় সেনা আইন
সেনা আইনে খানিক অনাসক্তি আমাকে আপ্লুত করে
তাই বার বার ভাঙতে যেয়ে পিছিয়ে আসি কতিপয় স্রোতের তোড়ে! 
 
মনে রেখো, একদিন আমিও আইন করব আইন ভাঙার
নিঃসীম কালো পিচঢালা রাজপথ না হোক একান্ত মনের ঘরে
অথবা একটা শুভ্র মাইক্রো ভাড়া করে নিয়ে এসে নিজের বাড়ি,
জানোই তো, দরোজার খিল এঁটে দিলে-
আমিও হতে পারি সেনাশাসকসম শক্তিমান
ভয় কেটে গেলে নিঃসীম আকাশ দাঁড়িয়ে যাবে মাথার ওপর
সে আলগোছে ছায়াশোভিত ঢঙে কানে কানে বলে যাবে- ভাঙো আইন!
 
আমি আইন ভেঙে আইনের পথে দাঁড়িয়ে গিয়ে জারি করে দেব আরেক আইন
প্রকাশ্যে রাস্তায় নেমে আসবে বিপ্লবীরা আইন ভেঙে; সেনা আইন ভেঙে
সেনারা সব নেমে যাবে রাস্তায় আইনের তুড়ি নিয়ে
আমার আইন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে তাদের তোমাকে সাথে নিয়ে,
যে দরোজা খিল আঁটা গেয়ো রথ সেখানে পৌঁছায় না আইন
হোক না সে সেনা আইন কোনো অথবা গেয়ো বুনো আইন
সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়ে আমাদের একান্ত গণতন্ত্রের কাছে
একজন ফতোয়াজীবি বাড়ি বাড়ি যাবে তল্পিতল্পা সাথে নিয়ে
ভিখিরি বেশে করে যাবে আইন অমান্যের সমূহ সংজ্ঞায়ন।
 
জগতের সুশীলেরা পত্রিকায় ঝড় তুলে করে যাক কুৎসা রটনা
আমি তবে খিল আঁটা ঘরে গণতন্ত্র শিখবো, করে যাবো গণতন্ত্রের শ্লোকপাঠ!
 
মঞ্চে এক সূর্যসন্তান
 
এটা একটা কবিতা, উৎকৃষ্ট কবিতা
 ভাবতে পারো আত্মপ্রচার,হয়তো তা-ই
 আমার বাবা এক মুক্তিযোদ্ধা, গণযুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা
 সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে পেড়ে এনেছিলেন এক দেশ;বাংলাদেশ।
 
 বাংলাদেশ,তোমার জন্ম যে পথ বেয়ে
 সে পথের কোনো এক মাসে এসেছি আমিও
 যদিও তুমি আমা থেকে বছর কয়েক বড়
 তবু আমিও দেখিনি তোমা থেকে খুব একটা কম
 হয়ত তোমার মতো নয় অভিজ্ঞ কোনও এক
 ভাবতে পারো পোড় খাওয়াজন, খাঁটি সোনা!
 
 এই ফাল্গুন গত হয়েছিল গত বছরে
 তা লিখে রাখেনি কোনো সংবিধান
 ছাপা হয়নি কোনো খবরের কাগজে
 কোনো টক-শো তে বসেনি কোনো টিভি চ্যানেল
 তবে আমি লিখে রেখেছিলাম বলে ফের অবগাহন করি
 আর একটা জ্বলজ্বলে সূর্যে রাখি তুমুল পদক্ষেপ
 তোমাকে  সামনে রেখে।
 
 এ আমি গর্ব করতেই পারি আমার পিতাকে নিয়ে
 গর্ব করতে পারে আমার পিতামহ, তাঁর পিতা আর পিতামহ
 আমার পরিজন, আত্মীয়-অনাত্মীয়
 একটা সূর্য সন্তানের দেখা পেয়েছে বলে।
 দিন যায়, মাস যায়, আসে আর একটা দিন –মাস
 ঘটনা যা-ই ঘটে যাক এই ফেব্রুয়ারিতে
 যতই পিলখানা ঝড়ে ঈশ্বরকে কাঠগড়ায় আনে বিশ্বলোক
 আমি এই চৈত্রে এসে ঘোষণা দিয়েছি শ্রেষ্ঠত্ত্বের
 কারণটাও জানে সবে-
 মঞ্চে দাঁড়িয়ে গেছে এক সূর্যসন্তান। 
 
ক্রেডিট কার্ড
 
অনেকগুলো ক্রেডিট কার্ডে অনেক লিমিট, সিলভার-গোল্ড
পাড়ায় পাড়ায় হাতছানি দিয়ে ডাকে এটিএম বুথ
কদাচ পা বাড়াই, কদাচ অবজ্ঞা করি নিতান্ত অবহেলায়,
এটিএম বুথে অনেক টাকা, প্লাস্টিক মানি মুখ থুবড়ে পড়ে পকেটে
আমি পকেট হাতড়াই,যত্নে যতন করি যেন সাত রাজার ধন!
 
এটিএম বুথ আমার স্বজন,কার্ড পাঞ্চে টাকা আসে,শপিং হয়
টাকা আমার প্রিয় খুব তবু মাঝে মাঝে মনে হয়
কার্ড ঢুকালে যদি টাকার বদলে বেরিয়ে আসতো কোনো রূপসী
যার দীঘল কালো চুলে মুখ লুকাতাম সবিস্ময়,
যদি কার্ড ঢুকালে বের হতো এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা
আমি তবে খোঁপায় গুঁজে দিতাম তাঁর, ভালোবেসে!
 
একটা ক্রেডিট কার্ডে যদি আসে প্রেমের গোলাপ
আমি তবে গোলাপই নেবো, টাকাটাই সব নয় প্রেমময় গোলাপের কাছে
আমি গোলাপের পাপড়ি ধরে এগুতে যাবো
ভালোবাসা বিলাবো দেশ থেকে দেশে, মানুষে-মানুষে।
 
আমাকে একটা ক্রেডিট কার্ড দাও ব্যাংকওয়ালা
যে কার্ড আমাকে দেবে এক ঝাঁক পায়রা; শান্তির কপোত
তাদের ছড়িয়ে দিতাম দেশ থেকে দেশে-
ইরাক, ইরান, লিবিয়া, আফগানিস্তান কিংবা আফ্রিকার কোন দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে
অথবা জাতিগত দাঙ্গায় মরতে যাওয়াদের দেশে
আমার এ কার্ড হয়ে যেতো বারেবারে শান্তির শাদা পতাকা।
 
একটা কার্ড দাও, আমাকে একটা কার্ড দাও ব্যাংকওয়ালা
একটা ক্রেডিট কার্ড চাই আমার নিতান্ত প্লাস্টিকে মোড়া,
 
আমি প্রমাণে বসেছি আজ প্লাস্টিকেও জাগে প্রেম; বিশ্বময়!
 
গরীবের সংবিধান
 
গরীবের সংবিধান থাকার নিয়ম নাই
তাই সংবিধানের ধারা-উপধারাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ার নিয়ম কাছে
 অন্ধ জাদুকরের মতো তারা হাতড়ে বেড়ায় গণতন্ত্র
 তারা গরীব তাই গায়ের রঙ হয়ে যাবে পানসে আর
 সাদা চামড়া হয়ে ক্রমে হয়ে পড়বে ফ্যাকাশে,
 গরীবের বাচ্চাদের পেট মোটা হলে তারা সমুচ্চ ধিক্কার কুড়ায়
 পুষ্টিহীনতা নাম দেয় তাদের অথচ বিপরীত শ্রেণীদের বলে নাদুস-নুদুস।
 তারা জানেনা জন্মনিয়ন্ত্রণের ছলাকলা তাই একমুটো শান্তি আছড়ে পড়ে
 পোয়াতি বউদের কোলে; বুকে। সটান হয়ে এলে দেয় বিছানায়
 চোখে ভাসেনা কখনো চাঁদের আলো, হয়ে যায় অশ্লীল সঙ্গম
 কারণ তারা গরীব আর গরীবের সঙ্গম সুখ থাকতে নেই।
 
স্পর্শ
 
স্পর্শের অব্যবহিত পর চোখ বুঁজে আসে
 কামনার ঔরসে জন্ম নেয় বিন্দু বিন্দু ঘাম
 দিনের অপর পিঠ সামনে এলে
 অবদমিত ইচ্ছেগুলো প্রাণ পায় উন্মত্তরূপ
 ঘটনা প্রবাহের আগেকার ঘটনা স্থান করে খেরোখাতায়
 খাঁটি-মেকির প্রশ্ন আড়ালেই পড়ে থাকে
 প্রমত্ত সাগরের কাছে হার মানে বৈধতার প্রশ্ন!
 
বাংলাদেশ এক স্বপ্নপতাকা
 
জেনেছিলাম সে এক বিভীষণ
 যে রাতে চাঁদ ঢেকেছিল মুখ লজ্জায়। 
 সে চাঁদ উঠেছিল নিয়ে সমূহ আলো
 হায়নার মুখ দেখে হারিয়েছিল আপনার অবয়ব
 তবু রাত, সে রাত যে রাত ধরতে পারে
 ঝড়ের গতিবিধি তাই রাতময় থাকেনি সে রাত
 মাপতে বসেছিল কোন এক স্বপ্নদেশের দূরত্ব।
 
 হে চাঁদ, আমার নিয়ত দেখা চাঁদ
 তুমি দেখেছিলে একাত্তর
 আমার উজাড় হওয়া বাংলা গ্রাম
 নিথর প্রাণের ধানক্ষেতে রেসকোর্সের মাতম
 অথবা হঠাৎই হাওয়ায় হাওয়া জাগানো কালুরঘাট
 ইতিহাসের সাক্ষী থেকে ইতিহাসের স্বপ্নবুনন।
 
 সে রাত যদিও এক অলক্ষণে রাত
 তবু সে রাতই দেখিয়েছিল পথ সতেজ ভোরের
 আমার বাবার ইস্পাতসম হাত ধরে
 আমার মা নামের এক পতাকা ওড়াবার স্বপ্ন।
 
গ্লাসবদলের নেশা
 
তারা জানে-
 দিন দুয়েক পর সে পথে নেমেছে আধখানা পাগল এক
 আট-ঘাট বেধে 
 এই বিরতিদিনে পদস্পর্শ লাগেনি কারো 
 অথচ এ পথও মুখিয়ে ছিল অপরাপর পথের মত 
 স্পর্শের ব্যাকুলতায় বেধে ছিল বুকে পাথর কোনো
 আমাদের প্রতিবেশিজনও জানে
 আমার বাড়ি তোমাদের থেকে অনেকখানি দূর
 মাঝপথে এক সাঁকো আছে
 আগাগোড়া বাঁশ মোড়ানো
 লক্কর-ঝক্কর অবস্থায় দিন করে পার
 তবু ডাক দেয় সে নিজের মতো করে,
 তুমি কী  শুনেছিলে কভু তার ডাক
 একান্ত ঢঙে; নিজস্বতায়।
 আমি বাড়ি বাড়ি হাঁটি বাড়ি বাড়ি যাই
 বাড়িতে বাড়িতে বাড়িওয়ালাজন থাকে
 বাড়ির সত্ত্ব নিজের মতো করে
 আমি শোনে যাই প্রত্যুত্তরহীন 
 যেন কোনকালে কেউ কোনজন বলেছিল অসার সব
 আমার ডাক আসে সুদূর থেকে
 আমি হয়ে যাই সুদূরপিয়াসি এক
 নেশা নেশা সব, নেশায় মত্ত পৃথিবী
 তবু ফি-দিন করতে বসি নেশার গ্লাসবদল।
 
মধুরস
 
শুনছো কী আগুন ছোঁয়া চোখ
ঠিকরে বেরিয়ে আসছে চামড়া থেকে
পলাতক মরিচ গাছের রঙ মেখে
সামনে এগিয়ে আসে পেছনের দরোজা দিয়ে।
ওরা পাগল বলে লিখে রেখেছে আজকের সংবাদপত্র
তারা পরোয়া করেনি সামান্যই কারণ ময়ূরপুচ্ছে আদিখ্যেতা
উষ্ণতা জড়িয়ে রেখেছে জামার ভেতরে
বোতাম আটকানো উষ্ণতা-
বাইরে থেকে ছুঁয়ে দেখে যায় বদমায়েশ বাতাস,
এ যেন রূপকথার গল্প-
চোখ বুজে নিলে প্রবহমান বঙ্গোপসাগর
ঝাঁপ দাও ওহে ঝাঁপ দাও পর্বতশৃঙ্গ থেকে
দেখো একটা নিবিড় সময় অপেক্ষায় থাকে
মধুরসে সিক্ত হবে বলে!
 
 
আমার মৃত্যুদিনে
 
আমার জীবদৈহিক মৃত্যুদিনে মানুষের ঢল নেমেছিল
কিছু চাপা কান্না আর অভিসম্পাতে ভারী হয়েছিল পরিবেশ
কিছু কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় বুঝে উঠতে পারিনি অনেকেরই প্রতিক্রিয়া।
আমি ছিলাম ঠায় জাগতিক নীরবতা ভর করেছিল মুহুর্তেই
এ এক অদ্ভুত দৃশ্য আমাকে দিয়ে সাজানো মঞ্চ
অথচ অংশগ্রহণের সামান্য সামর্থ্য হারিয়েছিলাম নিমিষেই,
বুজে আছি চোখ, বন্ধ করা মনোদুয়ার দেখছি সব তবু মনে হয়
দেখিনি অথবা দেখা হয়নি কিছুই কেমন অচেনা-অজানা ক্ষণ।
হাত নাড়াতে গিয়ে দেখি নড়েনা হাত, নড়ে উঠে পৃথিবী
পা চালাতে দেখি বরফখণ্ড পা, সরে যায় পুরো ভূ-খণ্ড
চাঁদ-সূর্যের ভেদ ভুলে মনে হয় এমন কিছুই ছিল না কোনোকালেই
মিহি বাতাস আসে শনশন স্বরে তবু অনুভূতিশূন্যতা মোড়া!
আমার জীবদৈহিক মৃত্যুদিনের মানবঢলে আমি কাউকেই চিনতে পারিনি
এমনকি আমার পরিজন যাদের সাথে ছিল আমার জন্মসহযোগ
আমার ধমণীতে বয়ে যাওয়া যে রক্তের ধারাতে আরো ক’জন
শেয়ার করেছিল তাদেরও আলাদা করতে পারিনি সময়ের তোড়ে,
আমার রক্তে কিছু রক্তের জন্ম হয়েছিল বলে জানে লোকে তারাও অজানা ক্ষেত্র
মনে হয় আমি ছিলাম একাকী একজন; অনাহুত আগন্তুক কোনো!
কেন এত মানুষের ঢল, কেন এত প্রার্থনাসভা অথবা শেষকৃত্যানুষ্ঠান
আমি ভাবতে গিয়ে থমকে যাই-কেউ একজন কেড়ে নেয় ভাবনা সক্ষমতা
আমার ভাবনাসমূহ আমাতেই ফিরে আসে সে বিরূপ সময়ে।
আমার জীবদৈহিক মৃত্যুদিনে আমার সক্ষমতা হারালাম আনুষ্ঠানিক
তার আগেই কোন একসময়ে হয়েছিলো মনোদৈহিক মৃত্যু,
সে মৃত্যুদিনে আমার বাড়িতে নামেনি কোনো মানুষের ঢল
এক ফোঁটাও অশ্রু ঝরেনি কারো চোখ দিয়ে
কেউ বসেনি প্রার্থনাসভায়, কোনো আয়োজনই ছিল না শেষকৃত্যানুষ্ঠানের
পরিজন ভেবেছিলাম জনমভর যাদের তারাও খেয়ালে নেয়নি কখনো
অবেলায় নিজেকে হারিয়ে ঠায় পড়েছিলাম নিজস্ব ভূমিসমতটে।
আমার মৃত্যুদিন আমাকে শিখিয়েছে বিস্তর তাই আমি একাকীজন
আমার মৃত্যুদিন আমাকে বলেছে আমি ছিলাম প্রকৃতই অস্তিত্বহীন।
 
 
গ্রহণ
 
চাঁদের সাথে লুকোচুরিতে চাঁদ বসত গাড়ে আমার বাড়ি
আমি তাকে আগলাই বুকের জমিনে
একটা চাঁদ ঠায় আমাকে পাহারা দেয় আকাশ মাঝে
আমিও আগলাই চোখে চোখে একান্তই চোখে রেখে
ঠিক ঠিক তোমাকে ভেবে তোমার মতো!
সহজাত চাঁদে সবার লোভ আমার ছিল ঢের
তবু আলগা হয় আর কতক চাঁদ এক চাঁদ থেকে
তাই এ চাঁদে আমার ইস্পিত আবর্তন ইদানিংকালে চিরকালের জন্যে ।
এ চাঁদ আমার থাকে আমার জন্যে তবু এ চাঁদে লেগেছিল গ্রহণের ছোপ-
একটু আড়ালে যাও তুমি গ্রহণ লেগে যাবে তোমার উপর
আমি তবে পৃথিবী হারাবো; এক পৃথিবী আমার তোমার মাঝে
আমি আমার পৃথিবী আগলাবো বুকের জমিনে একান্ত করে!
 
 
গতির গোলক
 
আলগোছে ব্যস্ততম দিন ডাকে দিনান্তে ফেরে আপনার ঘরে
ঘরে ঘরে ঘরময় হয় সব। ঘরের প্রতিবিম্ব পড়ে থাকে মেঝের ‘পরে
মাঝ বরাবর জ্বলজ্বল করে রক্তালু চোখ; জঠরজ্বলা চোখ
কাল সারারাত পাতে পড়েনি যার একমুঠো দানাপানি
সে অদ্য ভোরে নেমে পড়েছে প্রেমসন্ধানে।
প্রেম, প্রেম সে কোন এক মাতাল প্রেম আপাত প্রেমসন্ধানী অলক্ষণে প্রেম
তাই স্বভাব প্রেমিক হারাতে যায় স্বভাবচরিত, হাত পাতে শূন্যে
খাঁ খাঁ মাঠে সহসা গড়িয়ে পড়ে স্বেদবিন্দু দ্যুতি নিয়ে
এক এক করে আগলায় পথ, আগলায় মাঠ। মাঠে জমে মাঠের ফসল
দূরে থেকে কতিপয় চোখ লক্ষ্য রাখে গতির গতিবিধি
গতিতে গতিতে মাতম ওঠে, সাজানো বাগানে বসে প্রজাপতিমেলা
ব্যস্ততমদিন ব্যস্ততার কাছে হার মানে, একহাতে আগলায় নিজেকে ফের
মেঝের রক্তালু চোখ তখনো সরব-হাপিত্যেশ করে ফিরে আসে নিজের কাছে
হার মানে কালের গতি; গতিহীনতাও মাঝে মাঝে দখলে নেয় গতির গোলক!
 
মৃত্যুঘন্টা বাঁজার আগে
 
মৃত্যুঘন্টা বাঁজার আগে একবার চেয়ে নাও নিজেকে
কেমন ছিল তোমাদের অতীত কিংবা তার আগেকারক্ষন 
যেমনটা ছিল তোমাদের পূর্বপুরুষ তার কিছু কী পেয়েছিলে তুমি
না-কী সবকিছুই ফেলে এসেছো অলক্ষণে দিনের কাছে;
এ দিন সেদিন সেসব দিনের কাছে হাত পাতে
খাঁ-খাঁ হাত সেই আগেকার মতই থাকে কপর্দকহীন
একটা কিছু দিলে তবে হয়ে যেতো কানায়-কানায় পূর্ণ কোনো!
একবার মৃত্যুঘন্টা বাঁজার আগে জীবনের গান বাজে
জীবনগানের কাছে হার মানে অপরাপর সব; ব্যস্ত ভবিষ্যত
তাই ভবিষ্যতের ভবিতব্যের কাছে আমাদের দায় থাকে
সাক্ষাৎ প্রতিমারূপী অচেনা কোন বন্দরে ভেড়ানো তরী,
তোমরা তরী ভেড়াও ফের, তরীও কাছে আসে ফিরে ফিরে।
তোমরা আর তরীগুলো মাঝে মাঝে মিলেমিশে একাকার হয়
আমি দূর থেকে অনুভবে নিই চেনা গন্ধ অচেনা ঢঙে,
পালাবদল আসে পালাবদলরূপে, সাথে সাথে হাঁটে মৃত্যুদূত পোড়ামূখি সেজে
আমি তাদের হারিয়েছি অদ্যাবধি-
তোমাদের বাড়ি  তার বাড়ি থেকে কতদূর!
 
 
 
 
আয়ু
 
দিনভর রাত খুঁজি রাত এলে পাখা মেলে দিবাযাত্রার স্বপ্নপালক
সেই কবে থেকে এ পথে পা বাড়িয়ে পায়ে পায়ে হাঁটা হয়ে যায় অগুন্তি পথ
কত পথ, শত পথ মাড়ানো পথ আলগোছে হাসে নিজস্বতায়
কেউ কখনো বৃথা মনোরথে নিজের আগল আগলায়
ব্যতিব্যস্ততার মুখোশ অথবা অসহায় চোখ গা-ঢাকা দেয় খানিক অবহেলায়।
যে দিন আমি দিনকে ধার করেছিলাম আলখেল্লাময় কোন এক পূর্বপুরুষ থেকে
সেও অদ্য নাম লিখিয়েছে তার পূর্বপুরুষী দেখানো পথে
এ আমার জন্যে আচানক কোন এক বন্ধুর পথ
সাধ্যাতীত মিহিরাত্রিতূল্য; নিনাদে নিনাদে অন্ধময়।
এক এক করে পা পড়লে পথে রচিত হয় পথের; এ ইতিহাসস্বীকৃত কোনো
তাই যে পথে একদা ছিল ব্যাঘ্রগর্জন অদ্য সেখানে বসত গাড়ে চিত্রা হরিণ
ডোরায়-ডোরায় আঁকা ইতিহাস; পূর্বপুরুষী
আমি হাত পাঁতি ইতিহাসে, সে মুখ লুকায় তার ইতিহাসে
ইতিহাস ইতিহাসে খেল জমে অদূরে ঢাক বাজে খালি কলসীর
খালি কলসীর উপুড়ে মানা তাই যথাবিহীত আগাগোড়া।
দিন দিনান্তে রাতে থামে, রাতের পথই ঐ একই পথে
তাই স্বভাব রাতে রাত নামে-
চুপিসারে বলে যায় কেউ আজো তবে কমে গেলো আর একটা দিনের আয়ু!
 
খেলপুতুল
 
যাদুবাস্তবতায় আছি, আছি ঘোরে- আত্মঘোরে
দিন দিন প্রতিদিন দিন গুনি, দিনের ফেরে আটকা পড়ি
দিনান্তে দিনের কাছে আসবো বলে রাত কাটে অযথা ঘোরে,
ঘোর, ঘোর দিনের ঘোর; রাতের ঘোরে আটকায় কদাচিৎ
রাত গুনি রাতের গহীন থেকে রাতভর
এভাবে কেটে যায়, কাটিয়ে দেয়া হয়ে যায়
মনে হয় ঘূর্ণাবর্তে জীবন-
সে খেলে আমাকে নিয়ে আমি হয়ে যাই তার খেলপুতুল।
 
মিঠাপানির যৌবন 
 
একটা রাতজাগা রাতে কল্পলোকে পথ হাতড়ায় ক’জন পরিব্রাজক
তাদের সুতীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণী ধ্যানে পড়শীদের ঘুম ভাঙে মাঝরাতে
বাতাসের মিহিস্বর আলতো করে ঠোকর মারে জানালার কপাটে
অথচ ভেন্টিলেটরে তার সমূহ আপত্তিবিশেষ।
একদিন, একদিন এভাবে করে কেটে গেছে অনেকদিন
দখিনা হাওয়া নাম লিখিয়েছে প্রৌঢ়ত্বের কাতারে
যারা শুনে তারা হি হি করে হেসে উঠে
কিছু কিছু হাসি আলাদাভাবে আলগা হয় হাসি চরিত্র থেকে
কিছু হাসি প্রতিবিম্বিত হয়ে ফিরে আসে মনের গহীন কোণে।
ধ্যানরত কারো কারো যতিচিহ্ন পড়ে মাঝপথে থেমে পড়ে ধ্যান
যুবাযৌবনের পলিমাটিতে খানিক আঁচড় লাগে আলগোছে
ইস, কী দুঃসহ আনন্দসজ্জা; হাওয়া দেখিয়ে পথ হারায় যৌবনকাল,
যৌবন ওহে কল্পভ্রম অবিনাশী যৌবন-
আমাকে দেখাও, আমাকে চেনাও সুমিষ্ট সেই মিঠাপানির হৃদ।
 
জীবনের পদত্যাগপত্র
 
এত কিছু জানা  ছিল না
তাই জীবনের পদত্যাগপত্র জমা দেয়া হয়নি
কারো কাছে-
মাঝখানে বত্রিশ দাঁত আরশোলা কাটে
এ সত্য সত্যই এক অবিন্যস্ত সময়
ঢাকা পড়ে উৎসাহপ্রবণ চেহারার আড়ালে।
বিশ্বাস করো করমর্দনের বাকী আছে
টুকরো পোষাকের বিন্যাস হয়নি বোতামঘরে
তাই পরিচয়পর্বে সন্তর্পনে সামনে এসেছিল
এক উদাসী সাংবাদিক,
আমি তাকে দেখাতে চেয়েছিলাম বয়সের গতি
কিন্তু সময় দেবার সময় ছিল না বলে
দরোজাটা বন্ধ হয়েছিল প্রেতহাসি দিয়ে।
ইদানিং পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছি-
ঠিক যেন স্বর্গীয় মরুদ্যান, নিকষ কালোর আড়ালে
আচানক শরীরী ভাষাসমেত-
সত্যায়ন করে দিয়েছেন স্বয়ং ঈশ্বর
তাই আজ জীবনের পদত্যাগপত্র উপস্থাপন করবো
নিজের কাছে; প্রেম-অপ্রেমহীন জীবনের কাছে।
 
বয়স্কদের নীল আকাশ থাকতে নেই
 
ঘন কালো রাতে মাঝে মাঝে হাতছানি দেয়
বিশাল আকাশ-
অর্ন্তচোখ ইশারায় ডাকে মিহিস্বর কানে আসে তার
আশপাশকার জন নির্বাক থাকে বয়স্কজনের মতো।
মাঝে মাঝে আকাশ রঙ বদলায় নিজস্ব ঢঙে
যেন পেখমতোলা জলের মতো হাতড়ানো পথ
যারা চেনে তাকে তারাই কেবল পড়তে পারে
সে পথেও বাস ছিল এক আজব কূয়োর,
কেউ কেউ ভাবে কোন সে কূয়ো অথবা আদৌ কূয়ো কোনো
এ যে এক সাক্ষাৎ দলাপাকানো মেঘভেলা
ক্রমশ ভেঙ্গে চুড়ে নেমে আসে মাটির দিকে।
ঘন কালো রাত মেঘমালা জমানো এক আজব জুজু
উত্তরাধিকার ধারণ করে তার পূর্ববর্তী থেকে
সে রূপকথা যুগ থেকে ডেকে চলে বাছাইজনদের,
প্রেম-অপ্রেম দ্বন্দ্বে যারা মাতে
তারা প্রত্যুত্তর হেলায় বসে পড়ে ঠায়
তাদের গায়ের চামড়া ঝুলতে থাকে
তারা বয়স্ক হতে থাকে দিনে-দিনে-
তাদের কানে-কানে  প্রতিধ্বনি হয় সে মেঘধ্বনী-
বয়স্কদের কোন নীল আকাশ থাকতে নেই!
 
ব্যাকরণ
 
চতুরতার নিজস্ব ব্যাকরণ থাকে
পদ, কাল, সমাস বিন্যাস নিবিড় বৃক্ষের মতো
তবু রাতের অন্ধকারের মাঝে তারা
মাঝে মাঝে আবিষ্কার করে সলাজ সূর্যের।
চতুরের ক্লান্ত তনুতে নিয়ত প্রজাপতির বাস
ছাপোষা টিকটিকির মতোই নিরীহ লেজ
মাঝে মাঝে ধূমায়িত আবরণ হানা দেয় পাড়াঘরে
লেজখসানো কালে; ধীরলয়ে!
 
আগামীকাল
 
রোজ রোজ ভেবে যাই আগামীকাল
অথচ আগামীকাল রোজকার মতোই আজ হয়ে যায়
এভাবেই নিয়মানুবর্ত কালের ঘড়ির মতো,
আমাদের আগামীকাল আগামী দিনেই থাক
সবকিছুতে আগামীকাল আগামীদিনেই-
অথচ তোমাকে ভাবার কালে আমার কোন আগামীকাল নেই
তোমাকে চাওয়ার কালে সবকিছু হোক আজ ,আজকের মতোই!
 
 
পাখি
 
সবশেষে পাখি হবার কালে তুমি নেমে এলে ধরায়। ডানা ঝাপটানোর শব্দে কেঁপে  উঠেছিল যে দেহকোষ তার খানিক বিশ্রামের কালে আমি নেমে পড়ি আপনার কর্মে। যার মূখ্য ভূমিকায় থেকেছিল তোমার নির্বাক চাহনি!
 
তোমার চাহনি ভাষা আমি পড়তে জানি তাই অদ্যকায় একটা গোলাপকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম তার আজন্ম কাঙ্খিত পথ। তারপর তোমার পথ চাওয়া, পথের পাশে নিজেকে গুটিয়ে রাখা। যদি আসো তবে যেন আমাকে ছাড়া পড়েনা আর কোথাও তোমার চোখ। 
 
একদিন একটা নদীকে বলেছিলাম তোমার বাড়ি যাবার পথ দেখিয়ে দিতে। তার নৈঃশব্দ আর্তনাদ আমাকে কানে কানে বলেছিল কথাটা ফিরিয়ে নিতে। আমি কথাটা ফিরিয়ে নিইনি পাছে চাউর হয়ে যায় কথকতাগুলো তোমার কাছে! যদি তুমি ভুল করে ভুল বুঝো! তবে আমার হারানো হয়ে যায় সব!
 
তোমার কাছে একদিন কোন এক নিস্তরঙ্গ বিকেলে বলেছিলাম ভালোবাসার কথা। বলেছিলে, ভালোবাসা ভালোবেসেই হয়; তার কতটুকু রাখা আছে তোমার কাছে? আমি সময়ের কাছে উত্তরটা আছে বলে বলেছিলাম, ভালোবেসে তবেই এসেছি ভালোবাসতে! তারপরের কাহিনী জেনে গেছে সবে- আপনাকে বন্ধক রেখে ভালোবাসার কাছে ছুটে যাওয়া। বহতা নদীর মতো গতিময়তাকে ধর্ম জেনে তোমাতেই আকণ্ঠ মজে যাওয়া!
 
একদিন কথা ছিল পাশে থেকে পাড়ি দেবো সবগুলো পথ। যে পথে হাটেনি আর কেউ! তুমি বলেছিলে এ পথে কী আছে? ভালোবাসা ছাড়া আমার বলার ছিল না কিছু। তাই বলেছিলাম, ভালোবাসা আছে শুধু ভালোবাসা! তারপরই তুমি পাখি হয়ে গেলে; নীলাকাশের পাখি!
 
অদ্যকার কথা বলছি বলে-পাখিকুল হয়ে গেছে পাখি ছাড়া অন্য কোনো! পাখি পাখি কত পাখি! সব পাখিই চোখে রাখি। চোখে চোখে চোখ দেখে চিনে নিই সেই সে সুহৃদ!
 
কবির য়াহমদ
 
 
 কায়মনোবাক্য কায়মনোবাক্যে জড়ায়
 একদিন দিন হয় প্রখর রৌদ্রতাপে
 জানালার আরশীতে দেখে যায় সে আপনার মুখ
 এ মুখ পোড়ামুখি সাজে অবেলার তরে
 বেলা বেলা কত বেলা যায়
 আমার সময় হয় না কেবল বেলা ধরার!
 
 জন্মে জেনেছি আমি জন্মালেই হাঁটা ধরা হয়
 হেটে যাওয়া পথে, এ পথ বন্ধুর কোনো
 পূর্বপুরুষের দেখানো পথ তবু হাঁটা ধরা চাই নূতন করে
 তাই জন্মান্ধক্ষণে সামনে আসে আমার নিশ-পিশ করা হাত,
 হাতে হাতে হাত পাতে একটুকরো জলে জমে সখ্যতা
 জলে জলে জলকেলি বেলা জানে বেলাময় খেলা
 এ এক আচানক কোনো আমাকে নিয়ে খেলে
 আমি খেলি তার ছলাকলা নিয়ে-
 আমাকে হারায় আমার খোলস; এক নিরীহ কর্পোরেট চাকর।
 
 আমার বলে দেয়া কাল কাল রাতে ঝড় হয়েছিল
 ওড়াতে চাইছিল সমূহ কাল তবু মাঝপথ মাঝপথে থামে
 পথে পথে আর একটা পথ যোগ দিলে
 এ অহর্নিশ পথে থামে এক বেকুব কবি।
 
 শুনেছি, আমার অবিশ্রান্ত সময়ে আমাতে বিতর্ক হয়েছিল
 অন্তঃস্থ “আ”নিয়ে। আমিও বলেছি আমি ঠাঁঠ না বাইরের
 নাচিনি কোনকালেও বাঈজী নাচ তাই কোন হাতেও ওঠেনি কোন উপঢৌকন
 নিজে নিজেতে একেশ্বর হয়েও সব কালের কাছে হয়েছি নত
 ক্ষমা চেয়েছি নিজেতে করজোরে একান্ত নিজস্বতায়
 আমি আমাতে সমর্পণ করে তোমাদের কাছে বলেছি দৃঢ়তায়
 আমিই কেবল আমাকে জানি তাই চুপি চুপি বলি
 চলো নষ্ট হই, নষ্ট হয়ে যাই নিজের মাঝে আপনাকে বিলোনোর কালে,
 আমার হাতে জন্মে আর এক হাত পায়ে জাগে আর এক পা
 মগজে মগজে জন্মায় নূতন কবির আচানক কবির
 নষ্টের সংজ্ঞা পাল্টে যায় আমার হাতে, স্বভাব কবিরের হাতে
 এ এক আজব কাল তাই আমিই কেবল বলে দিতে পারি
 এ আমার পূর্বপুরুষের দায় কবির করেছে বলে তাই শেষবেলায় এসে
 কবিরের কাছে কবির হারে খোলস পাল্টে হয় য়াহমদ
এক সাদামাটা কবির য়াহমদ।
 
সময়ের কানাকড়ি
 
সবশেষে পাখি হয়ে যাবার কালে খসে পড়েছিল অবাধ্য পালক ধূসর পৃথিবীতে। পৃথিবীও মূখিয়ে ছিল, চাতকরূপি প্রতীক্ষায় কাটিয়েছিল কত শত যুগ যার হিসেব রাখেনি কালের ঘড়ি। পালে পালে লাগা উদ্দাম হাওয়ায় নিথর প্রাণে জাগে প্রাণের আবেশ। বিকিরণ ঘটে আর কিছু আলোর, মূখর হয় পৃথিবীর গোটা অবয়ব।
জেনেছিলাম, পৃথিবীর পথে হাটতে গেলে পায়ের তলায় খানিক অবলম্বন জরুরী। আমার জানবার কাল হারাতে চায় আমাকে আন্ধারে রেখে। আমি যে পথ হাতড়াই সে পথেও রেখে যেতে চাই খানিক দাগ যাতে করে বিস্মরণকালে কেউ কোনজন ক্ষণিকের জন্যে হলেও আমাকে ভেবে পার করে আর কিছু ক্ষণ। আমার হেটে যাওয়া পথ আমাকে আকুল করে দেখায় ওড়ে যাওয়া পাখিবিশেষের খসানো ডানা। আমার আকুলতা বাড়ে বাঁচার আর তোমাকে একান্ত করে কাছে টানার।
সেই কবে থেকে পথশুরুকালের স্থির করা লক্ষ্যবিন্দু কালেভদ্রে লক্ষ্যচ্যুত হয় বলে জেনেছিলাম যে বার্তা বার্তাবাহির কাছে তা সময়ের ফেরে দেখায় তার পরিপুষ্ট অবয়ব। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখে যাই আর আলগোছে হা-হুতাশায় ভুগে তোমাকে ভাবি-সময়কে অতিক্রম করবো বলে।
 
আমার যে সময় আমার বলে আর সবে লিখে দিয়ে রেখেছে তার কিছুটা হলেও ভাগ দিয়ে দিতে চাই তোমার জন্যে। তুমি যদি একান্ত কোন সময় ধার চাও আমার কাছে আমি তিন সত্যি দিয়ে বলছি-আমি আমার কাছে রাখবো না এ সময়ের কানাকড়িও!
 
 
 
ঐশ্বরিক গন্ধ
 
ঐশ্বরিক আশ্চর্য দর্শনে মেতে আছে যুবা
তার চোখেমুখে কামাগ্নি উপচে পড়ে
মাঝরাত সামনে এলে একাকীত্বের ঢেউ-
এখানে নন্দনের বালাই নেই কোনো
আছে কেবল দরোজা বন্ধের অভিপ্রায়।
 
একটা অবধারিত বিষাক্ত ফুল লালন করেছে সে
বিগত জীবন থেকে এ জীবনে এসেও
মাথার অবিন্যাস্ত চুলের ভেতর থেকে তীব্র ঘাম ঝরে
শ্লথ ভঙ্গিমায় এক লহমায় দেখে নেয় পরিবেশ
যেখানে ঝুল বারান্দা সেখানে ধূর্ত চোখ খুঁজে
নোটারি পাবলিকের শাহরিক গর্জন গ্রাম্য ভঙ্গিমায়। 
 
এ যুবা গন্ধ ঝুজে তীব্র ঐশ্বরিক গন্ধ
বেড়ে চলে পৃথিবীর গতি একাকী মাঝরাতে হেলে পড়ে চাঁদ
আচমকা ঈশ্বর নামেন মাটির পাত্রে; ইস কী আরাধ্য উত্তরীয় হাওয়া
সব একাকার হয় একান্ত সময়ে, সাধু সন্ন্যাসহীন জীবনে। 
 
 
 
***********
শেষ ফ্ল্যাপঃ
 
নিজের আর অপরাপরের কাছে অনেক বেশি বড় হবার সাধ সবার চিরন্তন। তাই নিজেকে উদাহরণ ভেবে যারা চলে তাদের সাহচর্য চাইনি কোনদিনই! তবু মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। কাজের জন্যে কাজ নয় নিজেকে যাচাইয়ের জন্যে কাজ করে যাই নিয়ত। এখানে সাফল্যের সাথেও ব্যর্থতা আসে। তবু একবার বিশ্বাস করতে শিখে গেছি- যারা বিশ্বাস করে ভালো আছে তারা থাকেই!
 
পিতাঃ আজিজ উদ্দিন চৌধুরী
মাতাঃ ফখরুন নেছা আজিজ
জন্মস্থানঃ চন্দরপুর, আলীনগর, বিয়ানীবাজার, সিলেট।
জন্মতারিখঃ ৩০ ডিসেম্বর।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ রাত আর ঘুমের  কৃষ্ণপাঠ (২০০৮), আমাদের ঈশ্বরের অ্যাপয়েনমেন্ট দরকার (২০০৯)
 
***************
 
 

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।