কেউ কী শুনছো-বিজয় চেতনার সে ধবনী-প্রতিধবনী!

 

ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্মমাস-আমারও! ডিসেম্বর মানে একটূকরো স্বাধীনতা।
 
আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। একটা দেশকে পেড়ে আনতে নিজের জীবন আর যৌবন বিসর্জন দিয়ে নেমে পড়েছিলেন যুদ্ধের মাঠে। প্রাণভয় তাকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। সামনে বন্ধুর পথ আর নিশ্চিত মৃত্যুর হাতছানি দেখেও পরিবার-পরিজন রেখে ছেড়েছিলেন বাড়ি। বাড়িতে ছিলেন তার বৃদ্ধা মা। বাবা মানে আমার দাদা আগেই ছেড়েছিলেন পৃথিবীর মায়া। বিয়ে তখনো করা হয়ে ওঠেনি। নিজ জীবনের কোনরূপ আশা-আকাঙ্খার কিছুই পূরণ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যখনই এসেছে দেশের ডাক,স্বাধীনতার হাতছানি তাকে আর কোন কিছুই টলাতে পারেনি এমনকি ব্যক্তিক জীবনের সমূহ মোহ।
 
আমাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানিবাজারের চন্দরপুর। ছোট্ট গ্রাম। হাতে গোণা মাত্র ক'টা বাড়ি। কিন্তু তারপরও এ গ্রাম গর্ব করতেই পারে আমার বাবাসহ চার-চারজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে। আমার বাবা তখনকার সময় আওয়ামীলীগ করতেন। তাই তাকে নামতে হয়েছিল সংগঠকের ভূমিকায়। ৩০/৩৫ বাড়ি নিয়ে যে গ্রামের অস্তিত্ব সেখান থেকে ৪জন সহ এলাকার অনেকেই নেমেছিল যুদ্ধে।
 
আমাদের এলাকার তখনকার চেয়ারম্যান ছিলেন একজন রাজাকার। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হল সে সময়ে আমাদের এলাকায় কোন প্রকার হত্যাকান্ড ঘটেনি। তিনি নিজ উদ্দ্যোগে সবাইকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছেন। আমার চাচা যেতে পারেননি মুক্তিযুদ্ধে। এক মুক্তিযোদ্ধার ভাই হিসেবে যুদ্ধের কোন একদিন তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হানাদারেরা। সবাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তার আশা। কিন্তু ইউনিয়নের রাজাকার চেয়ারম্যানের বদান্যতায় তাকেসহ আরো অনেককেই ফিরে পেয়েছিল তাদের পরিবার।
 
ডিসেম্বর মানেই জন্মমাস নয়-আমার কিংবা বাংলাদেশের। ডিসেম্বরের ১৬তে বাংলাদেশ আর আমি ৩০-এ। ডিসেম্বর মানে চেতনার মাস;বিজয় চেতনার। আমার সারা শরীর জুড়ে যে রক্ত বইছে আমার বাবার সে রক্ত উৎসারিত হয়েছিল আমার বাবার হাত ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে।
 
এ আমি গর্ব করতেই পারি আমার বাবাকে নিয়ে। আমার বুকের মাঝ দিয়ে যে বিজয়ের চেতনার মশাল প্রজ্জ্বলিত তা দিয়ে আমি হাত মিলাতে চাই আর অনেকগুলো হাতের সাথে যে হাতগুলো আগেই শপথ নিয়েছিল দেশ গড়ার।
 
কেউ কী শুনছো-বিজয় চেতনার সে ধবনী-প্রতিধবনী!
 

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।