একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২ ডায়েরি-৩: গেটে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে যুদ্ধংদেহী হয়ে

14/07/2012 16:59

 

মেলায় না গেলে কারো কারো পেটের ভাত হজম হয়না এমন লোকও আছে নাকি শুনেছিলাম। মাঝে মাঝে ভেবেছি এটা বাড়িয়ে বলা কথা। কিন্তু নিজেকে ভাবতে গিয়ে আজকাল ভাবতে বসেছি ঠিক কাঁটায় কাঁটায় না হলেও তার ধারে কাছে আছে অনেকেই। এটা আসলে ভেতর থেকে তাগিদের একটা ব্যাপার বলে এমন হয় মনে হচ্ছে। প্রতিদিনই হাজারো লোক আসছে মেলায়। তাদের অনেকেই আসে ঘুরাঘুরির জন্যে। কেউ আসে পরিচিতজনের সাথে দেখা আর আড্ডার জন্যে। আবার কেউ কেউ আসে বই কেনার জন্যে।
মেলায় শুক্র-শনিবার মানে হাজারো মানুষের ভীড়। শাহবাগ এলাকার সবগুলো রাস্তা যেন মিলিত হয় বাংলা একাডেমীর প্রান্তরে। দোয়েল চত্ত্বর থেকে বাংলা একাডেমী অথবা টিএসসি থেকে বাংলা একাডেমী পর্যন্ত যে শ’কয়েক মিটার দুরত্বের পথ ছুটির দিনে এ পথ পাড়ি দিতে পার হয়ে যায় মিনিট চল্লিশেক সময়। এর মূল কারণ লম্বা লাইন। লাইন ধরে সবাইকে এগুতে হয়। এর ব্যতিক্রম যে থাকেনা তা নয়। অনেককেই দেখা যায় লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে লাইনের কোন এক জায়গা দিয়ে ঢুকে যেতে। অনেকে আবার এলোপাথাড়ি হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ে কোন এক লাইন দিয়ে মেলাএ মাঝে। এভাবে লাইন ভাঙার একটা প্রবণতা আর সবার জায়গার মতো বইমেলায় লক্ষ্য করা যায়।
শুক্রবারে ছিল মেলায় ভয়াবহ অথচ আশাবাদী রকমের ভীড়। মেলায় এত লোক। ইস, সব্বাই যদি একটা করে হলেও বই কিনতো তাহলে নিশ্চয়ই মেলার শেষ সময়ে কোন স্টলে কোন বইই থাকত না! সবাই যে ক্রেতা তা নয়। অনেক লোকের মাঝে কিছু ক্রেতা সব কিনেছে বেশিরভাগই কেনেনি কিছু। হালকা চালের আড্ডা দিয়ে পার করিয়েছে সময়। সব বয়সের মানুষের এই উপস্থিতি আশাবাদী করতেই পারে প্রকাশনা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের। আজ যে কিনছে না কিছুই কাল হয়তো সে কিনবে, তা না হলে পরের দিন অথবা তার পরের দিন। এভাবে নিয়মিত আসতে থাকলে মানুষজন একটা সময়ে তারা বই কিনবেই কিনবে।
মেলার ঢুকার সময়ে যে লম্বা লাইন লক্ষ্য করা যায় তার শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে পুলিশ বাহিনীর লোকদের অনেকটা ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে অন্যান্য জায়গার চাইতে এখানে কিছুটা সুশৃঙ্খল সবাই। এটা ভাল লক্ষণ। যারা মেলায় আসে তারা নিশ্চয়ই জানে এখানে বইয়ের জন্যে আসা। তাই কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবেনা। তবু এর বাইরে যে শৃঙ্ক্ষলা ভঙ্গের কাহিনী যে নেই তা নয়। এর জন্যে মেলার গেটে যেখানে “যাচাই মেশীন” বসানো আছে সেখানে কয়েকজন পুলিশকে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এই লাঠি সংস্কৃতি খুব পীড়া দেয়। সৃজনশীল মানুষদের ভীড় যেখানে সেখানে পুলিশ লাঠি হাতে থাকবে কেন? পুলিশকে তাহলে লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় সব সময় থাকতে হবে! এ ব্যাপারে আসলে ভাবা উচিত। যেখানে মন আর মননের সন্নিবেশ সেখানে লাঠি উদ্ধত চোখরাঙানি কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এবারের বইমেলা নানা দিক থেকে ব্লগারদের জন্যে তাৎপর্যবহ। এবার অনেক ব্লগারের বই প্রকাশ পেয়েছে। মিডিয়াসহ পাঠকও মহলে বেশ সাড়া পড়েছে এসব বইয়ের ব্যাপারে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে তার প্রচারে। পাঠকরাও বেশ ভালো ভাবেই কিনে নিচ্ছে বইগুলো। এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে ব্লগগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে দিনে দিনে। একজন ব্লগার হিসেবে এটাকে আমি নিজে খুব ভালোভাবে উপভোগ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত-আধা পরিচিত সব ব্লগারদের বই কিনছি এবং আরো বই যেগুলো আসবে তাও কিনে নেব। এ ধারা আসলে অব্যাহত রাখতে হবে।
তারপরেও কিছু কথা থাকে; কিছু কথা থেকে যায়। অনেক ব্লগার যাদের বই বেরিয়েছে তারা শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন সব সময়। আমি অনেক ব্লগারদের দেখেছি যারা লেখক নিজে কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্যের কোন বই কিনেন নি। তারা একতরফাভাবে সবকিছুই চায়। কারো কারো মাঝে আমি কি হনুরে ভাবটা প্রবল। এই ভাবের সংখ্যা কম হলেও হেলাফেলার বিষয় নয় বলে মনে করি। লেখালেখির অর্থাৎ মেইল স্টিমে যাবার আগে ওমন মানসিকতাকে আসলে পরিহার করা উচিত। কারণ আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি লেখালেখি যেহেতু ভেতর থেকে আসে সুতরাং লেখকদের বিনীত হবার শিক্ষা দিয়ে যায় ভেতর থেকেই। এর অনুবাদ করার দায়িত্ব ব্যক্তিত্বের উপরই বর্তায়।
বাণিজ্যমেলার মত সবকিছুর বাণীজ্যিকীকরণ নয় বইমেলা আসুক মন আর মনন থেকে। পাঠকের এই সমাগম লেখকদের বিনীত করুক তার প্রতিদান দেবার জন্যে। ভালো লেখা আসুক লেখকের কলমের আগা দিয়ে। তৈরি হোক সবখানে সব জায়গায় কিছু ভালো লেখকের যারা মন, মনন আর লেখনির দিক থেকে হবে অনেক অনেক অনেকগুণ শক্তিশালী।
Back

Search site

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ। সব দায় এবং দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব।